সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি: জাতিসংঘ মহাসচিব


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক: সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নেওয়া সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই। আমরা আপনাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। আমরা আপনাদের সর্বোত্তম সফলতা কামনা করি। যেকোনো সহযোগিতা লাগলে আমাদের জানান।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আজ শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক বৈঠকে সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বিশ্বব্যাপী ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী’ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি চার দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় আসেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই সংস্কার প্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি ‘বাস্তব রূপান্তর’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি যে সংস্কার প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে’।
গুতেরেস বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি’। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে’।
‘মানবিক সহায়তা হ্রাস করা একটি অপরাধ’ উল্লেখ করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, কিন্তু তখন আবার বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অপরিসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়’।
তিনি বলেন, ‘আপনার আসার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারত না। আপনার সফর কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী’।
প্রধান উপদেষ্টা গুতেরেসকে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দলগুলো ছয়টি কমিশনের সুপারিশসমূহের সাথে একবার একমত হলে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচন সংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে, তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা চান, যাতে রোহিঙ্গারা সম্মানের সাথে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারে। তিনি বলেন, যতদিন তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে ততদিন পর্যন্ত তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা যেন নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। বিশ্বকে জানতে হবে তারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা হতাশার অনুভূতি রয়েছে’।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন।
গুতেরেস বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম ‘অসাধারণ’ এবং বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন,‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
অধ্যাপক ইউনূসও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদ্যেদের প্রশংসা করে বলেন, এই মিশনে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন,‘শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ’।
বৈঠকে ভূ-রাজনীতি, সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশেগুলোর সম্পর্কের বিষয় নিয়েও আলোচনায় হয়। অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরামকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কেও কথা বলেন, যা নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাপানসহ প্রায় প্রতিটি দেশের সমর্থন পেয়েছে।অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত, সংকোচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙ্গে পড়া অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে। রপ্তানি কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো অবস্থানে রয়েছে’।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অর্থনীতি এমনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ।তিনি বলেন,‘আমরা এলডিসি উত্তরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি’। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামলে লুটপাট হওয়া কয়েকশো বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতি তাকে ১৯৭৪ সালের পর্তুগালের বিপ্লবী দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আগে মন্ত্রণালয় থেকে ফোন আসত কার জামিন হবে কারটা হবে না


অনুপম নিউজ ডেস্ক: অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত সংক্রান্ত সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি মুলতুবি করেছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির বলেছেন, সুপ্রিমকোর্টের বাজেট থেকে টাকা বাঁচিয়ে আদালতে কম্পিউটার কিনে দিতে হচ্ছে। কারণ, অধস্তন আদালতের বিচারকরা হাতে সাক্ষীর জবানবন্দি লিখেন। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় সেটা করে না। তারা ফোন করে ভয় দেখায়। তারা সিএমএমকে (মুখ্য মহানগর হাকিম) নির্দেশনা দেয় কাকে জামিন দিতে হবে, কাকে জামিন দেওয়া যাবে না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকার আদালতে একজন সাক্ষীর (সজীব ওয়াজেদ জয়) সাক্ষ্যগ্রহনের প্রসঙ্গ টেনে শিশির মনির বলেন, তিনি সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন নিু আদালতে। সাক্ষ্য প্রদান শেষে বিচারক (অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর) এজলাস থেকে নেমে সাক্ষীর মান যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সেজন্য তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যান। কারণ, তিনি বিরাট সাক্ষী। এভাবে অধস্তন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো।
তিনি বলেন, যতদিন সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ থাকবে, ততদিন স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা এবং পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পথে বাধা থাকবে। এটা চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা অরিজিনাল সংবিধানের বিধান প্রতিস্থাপন চেয়েছি। যেখানে সবকিছু সুপ্রিমকোর্টের ওপর ছিল। অতি দ্রুত পৃথক সচিবালয় চেয়েছি।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতুবি করা হয়। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। অ্যামিকাস কিউরি সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরীফ ভূঁইয়া।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনিরের কাছে আদালত জানতে চান কেন পৃথক সচিবালয় দরকার। জবাবে আইনজীবী শিশির মনির অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন খবরদারির তথ্য তুলে ধরেন। এছাড়া অধস্তন আদালতের বিচারকদেরও বিভিন্ন অনিয়ম উল্লেখ করেন তিনি।
সংবিধানের ২২, ১০৭ ও ১০৯ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ২২ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের পৃথক্করণের কথা বলা হয়েছে। আদালতগুলোর ওপর তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে ১০৯ অনুচ্ছেদে। আর ১০৭ অনুচ্ছেদে রয়েছে আদালতের রীতি ও পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধিগুলো প্রণয়নের ক্ষমতা। সবসময় সুপ্রিমকোর্টের সুপারভিশনে প্র্যাকটিস ডাইরেকশন জারি করা হয়।
যেমন: আইনজীবীদের পোশাক পরিবর্তন করা হয়। এটা কীভাবে হয়? এটা ১০৭ অনুচ্ছেদের অধীনে করা হয়। এরপর হাইকোর্টের বিচারপতিদের ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, কে কোন বিভাগে যাবে (অধস্তন আদালত মনিটরিং)। এটা ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে হয়।
এ নিয়ে শিশির মনির বলেন, মাঝেমধ্যে আমাদের প্রধান বিচারপতি বলেন যে, আমরা দ্বৈত শাসনের মধ্যে আছি। এ দ্বৈত শাসনটা কেমন? আপনারা (হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) অধস্তন আদালত ভিজিট করে অনিয়ম-নিয়ম দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, এসে রিপোর্ট করছেন, কিন্তু আপনারা কোনো ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস ইস্যু করতে পারছেন না। কারণ, ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস ইস্যু করতে যেতে হবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের (আইন মন্ত্রণালয়) কাছে।
সুপ্রিমকোর্ট এটা (ডিসিপ্লিনারি প্রসিডিংস) ইনিশিয়েট করতে পারে না। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শের জন্য পাঠায়। অথচ অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের। সে জায়াগায় শুধু সার্কুলার ইস্যু করে তাদের (অধস্তন আদালতের) দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করছে সুপ্রিমকোর্ট।
শুনানির একপর্যায়ে শিশির মনির আরও বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি দেখার পর আর সুপ্রিমকোর্ট কিছু করতে পারছে না। তখন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ (আইন মন্ত্রণালয়) দরকার। যখন বদিল করতে চায়, তখন তারা (সুপ্রিমকোর্ট) পারছে না। যখন পদোন্নতি দিতে চায়, তখন পারছে না। যখন ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে চায়, তখন পারছে না। প্রধান বিচারপতি বলছেন, দিস ইস, হোয়াট ইজ এ দ্বৈত শাসন। এক শাসন প্রধান বিচারপতির হাতে। আরেক শাসন আইন মন্ত্রণালয়ে। যাবে কোথায়? সংবিধান অনুসারে সব করে দিচ্ছি। কিন্তু বদলিও করতে পারি না, পদোন্নতিও দিতে পারি না। ডিসিপ্লিনারির অ্যাকশনও নিতে পারি না!
অধস্তন আদালতের ১৫ বিচারক নিয়ে দুদকের চিঠি নিয়ে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বৃহস্পতিবার একটা খবর বেরিয়েছে। অধস্তন আদালতের ১৫ জন বিচারক নিয়ে দুদক চিঠি ইস্যু করেছে। আনফরচুনেটলি এরা অনেকে ঢাকার সিএমএমএ ছিল। আপনি যদি একজন পেশকারকে জিজ্ঞাসা করেন ওমুকের নামে এটা হয়েছে, তারা বলবে, স্যার ঠিক আছে। এটা এমনে এমনে হয়নি। তাদের দিয়ে রাজা-বাদশাহর ক্ষমতা এক্সারসাইজ করা হয়েছে। তাদের কলিগরা (অন্য বিচারকরা) তাদের দ্বারা নির্যাতিত। বিকজ অদৃশ্য হাত। তাদের মাধ্যমে বাকিদের নিয়ন্ত্রণ করত। এমনকি বদলির জন্য মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত দিলে বলত, আগে অমুকের সঙ্গে আলাপ কর।
আদালতে দুই আইনজীবীর আত্মসমর্পণ


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যা মামলায় ফেনী জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন দুই আইনজীবী। উচ্চ আদালতে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরের দিকে ফেনী জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন বাহার ও ছোটন কংস বনিক জামিন আবেদন করলে আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীর কথা শোনার পর আগামী ২৯ এপ্রিল শুনানীর দিন ধার্য করেন।
আদালত সূত্র জানায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা ও দায়রা জজ আদালতের কৌশলী এডভোকেট নাসির উদ্দিন বাহার, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট ছোটন কংস বণিক ফেনীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন৷ জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে তারা ফেনী জেলা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের কথা শুনে আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত জামিনের সময় বৃদ্ধি করেন। একই সঙ্গে মামলার এজহারে উল্লেখিত ঘটনার দিন দুই আসামির অবস্থান কোথায় ছিল তা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ মার্চ মামলার শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়।
ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান বলেন, দুই আইনজীবীর জামিনের বিষয়ে আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীর কথা শুনেছেন। আগামী ২৯ মার্চ পর্যন্ত জামিনের সময় বর্ধিত করা হয়েছে৷ ওইদিন জামিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক মেয়র লিটন ও তার স্ত্রী-কন্যার বিরুদ্ধে দুদকের ৩ মামলা


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক: রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার স্ত্রী সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক প্রতিরোধ আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ছাড়াও বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্দেহজনক লেনদেন করার অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন জানান, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মেয়র থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ১০ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।
এছাড়াও তার নিজ নামের ১২টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৫২ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ২৫১ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
এসব টাকা জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপরদিকে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী শাহীন আকতার স্বামীর সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ১১ কোটি ৪১ লাখ ৬২ হাজার ২৪৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।
এছাড়াও তার নামে থাকা ১৩টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ৭৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮০২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। তিনি এসব টাকা জ্ঞাতসারে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় শাহীন আকতার ও স্বামী এএইচএম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অন্যদিকে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে আনিকা ফারিহা জামান পিতার সহযোগিতায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬ কোটি ৮০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৮১ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।
তার নামে থাকা ৫টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আরও ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ৫৭৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এ মামলাতেও আনিকা ছাড়াও তার পিতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে আসামি করা হয়েছে।
জাপানকে হটিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এখন ক্যালিফোর্নিয়া


প্রেসনোট আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি জাপানকে ছাড়িয়েছে; তাতে মার্কিন অঙ্গরাজ্যটি এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠেছে।
বিবিসি লিখেছে, গভর্নর গ্যাভিন নিউসম আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ইউএস ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যানালাইসিসের নতুন তথ্য তুলে ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছেন।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ১০ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে জাপানে এর পরিমাণ ৪ দশমিক ০১ ট্রিলিয়ন ডলার। মার্কিন অঙ্গরাজ্যটি এখন কেবল জার্মানি, চীন এবং সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে।
নিউসমের ভাষ্য, “ক্যালিফোর্নিয়া কেবল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না – আমরা গতিপথ ঠিক করছি।”
বিবিসি লিখেছে, নতুন ওই পরিসংখ্যান এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন গভর্নর নিউসম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প ও কৃষি উত্পাদনে ক্যালিফোর্নিয়ার বড় হিস্যা রয়েছে। তাছাড়া এটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও বিশ্বের বিনোদন শিল্পের কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম দুই সমুদ্র বন্দরেরও অবস্থান সেখানে।
ট্রাম্পের যে নীতির কারণে বৈশ্বিক বাজার ও বাণিজ্যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেই শুল্কনীতি আরোপের ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা করেছেন বিশিষ্ট ডেমোক্রেটিক ও ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিউসম।
বিবিসি লিখেছে, উচ্চ শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশ ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যে প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন।
মেক্সিকো ও কানাডার ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। আর চীনের ওপর শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির সঙ্গে ‘সর্বাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আসা চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন এবং তার পাল্টায় মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন।
ট্রাম্প প্রশাসন গত সপ্তাহে বলেছিল, বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে নতুন শুল্ক যুক্ত হলে কিছু চীনা পণ্যের উপর শুল্ক ২৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
নিজের অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন নিউসম।
“আমরা যখন এই সাফল্য উদযাপন করছি, তখন বর্তমান ফেডারেল প্রশাসনের বেপরোয়া শুল্ক নীতির কারণে আমাদের অগ্রগতি হুমকির মুখে রয়েছে।
“ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি জাতিকে শক্তি যোগায় এবং এটিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।”
ট্রাম্প যুক্তি দেখিয়েছেন, তার বাণিজ্য যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কর আরোপের পরে কেবল ‘খেলার মাঠকে সমান’ করছে।
ট্রাম্প তার বাণিজ্যযুদ্ধকে এমনভাবে তুলে ধরছেন যে- যুক্তরাষ্ট্রের উপর বছরের পর বছর ধরে যে শুল্ক আরোপ হয়েছে, সেটিতে যৌক্তিক অবস্থায় নেওয়া।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করতেই এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এটি তার অর্থনৈতিক কার্যপ্রণালীর একটি প্রধান খুঁটি, সেই সঙ্গে সুদের হার কমাতে চান তিনি, যাতে করে আমেরিকানদের ঋণের ব্যয় কমে।
নতুন তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি ২৯ দশমিক ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার, চীনের ১৮ দশমিক ৭৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং জার্মানির ৪ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলারের পেছনেই রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া। ওই দেশগুলোর তুলনায় ক্যালিফোর্নিয়ার প্রবৃদ্ধি যে বেশি তাও পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
জন্মহার হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জাপানের অর্থনীতি চাপে রয়েছে; তাতে শ্রমশক্তি সংকুচিত হচ্ছে এবং সামাজিক সেবার খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আইএমএফের পূর্বাভাসে জাপানের প্রবৃদ্ধি আরও কমানো হয়েছে। সংস্থাটির ধারণা, শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধারণার চাইতেও ধীরে সুদের হার বাড়াবে।
২১ দিনে প্রায় ১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে


২০২৪-২৫ অর্থবছরে এপ্রিল মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশীরা প্রায় ১.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা প্রবাসী আয়ের প্রবাহে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী প্রবণতা অব্যাহত রেখেছে।
এর আগে মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ ৩.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসীরা দেশে প্রায় ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২৪ সালের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২৪ সালের পুরো এপ্রিল মাসে দেশে পাঠানো প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ২.০৪ বিলিয়ন ডলার। তার বিপরীতে চলতি বছর এপ্রিলের ২১ দিনের মধ্যেই এসেছে ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে একদিনে বাংলাদেশ ৮৫ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২১শে এপ্রিল পর্যন্ত রেমিট্যান্স ২৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.৭৫ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই ২০২৩ থেকে ২১ এপ্রিল ২০২৪) ছিল ১৮.৪৭ বিলিয়ন ডলার।