শাবান মাস শেষে নবীজি (সা.)-এর খুতবা


আসআদ শাহীন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে রমজান মাসের গুরুত্ব ছিল অসীম। তিনি কয়েক মাস আগে থেকেই এ মাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। যখন রজব মাস শুরু হতো, তখনই তাঁর অন্তরে রমজানের জন্য গভীর আগ্রহ জেগে উঠত। তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন : হে আল্লাহ! আমাদের রমজান পর্যন্ত জীবিত রেখো।
(আদ-দুআ লিত তাবরানি, পৃষ্ঠা-২৮৪, হাদিস : ৯১২)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন রজব মাস আসত, তখন রাসুল (সা.) এই দোয়া
পড়তেন : হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করো এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
(তাবরানি ফিল আওসাত, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৩৪০, হাদিস : ৪৭৭৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের হিসাব এত গুরুত্ব সহকারে রাখতেন যে অন্য কোনো মাসের হিসাব ততটা গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন না। অতঃপর তিনি রমজানের চাঁদ দেখেই রোজা পালন করতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করতেন।
এরপর রোজা রাখতেন।
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের আগমনের আনন্দ প্রকাশ করতেন আর আগে থেকেই তার প্রস্তুতি নিতেন এবং শাবান মাসে অধিক পরিমাণে রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) আরো বলেন, রমজান মাস ছাড়া আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান মাসের চেয়ে বেশি রোজা রাখতে দেখিনি।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৬৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রমজান শুরু হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক বন্দিকে মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক অভাবীকে সাধ্যমতো মুক্ত হাতে দান করতেন।
(শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬৩৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো বলতেন—যখন রমজান মাস শুরু হয়, তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)
অযুত কল্যাণের উৎস এই মাহে রমজান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করে বলেন—হে কল্যাণের অন্বেষণকারী! সামনে এগিয়ে আসো, আর হে মন্দের পথিক! বিরত হও। আল্লাহর কাছে বহু মানুষ আছে, যাদের তিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, এবং এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতিটি রাতেই অব্যাহত থাকে।
(জামে আত-তিরমিজি, হাদিস : ১৩৯৫)
শাবানের শেষ রাতে প্রদত্ত নবীজি (সা.)-এর খুতবা
শাবান মাসে, বিশেষত এর শেষ রাতে এবং রমজানের প্রথম দিনগুলোতে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবিদের একত্র করতেন, রমজানের গুরুত্ব নিয়ে খুতবা দিতেন, এর অসীম ফজিলত বর্ণনা করতেন এবং এ মহিমান্বিত মাসের কদর করতে উদ্বুদ্ধ করতেন।
যাতে তারা আগেভাগেই রমজানের অপেক্ষায় থাকে এবং সম্পূর্ণ একাগ্রচিত্তে এই বরকতময় মাসের রহমত ও কল্যাণে নিমগ্ন হতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবায় বলেন—‘হে মানুষ! এক মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করছে—এটি এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ এ মাসের রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং এর রাত্রিগুলোর কিয়াম (তারাবি)-কে সুন্নত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, সে যেন অন্য কোনো মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময় সত্তরটি ফরজ পালন করল। এটি ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি পারস্পরিক সহানুভূতির মাস এবং এমন একটি মাস, যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
রমজান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতে তিনি আরো বলেন, এই মাসে যে ব্যক্তি তার দাস-দাসীদের (কর্মচারী বা অধীনদের) দায়িত্ব হালকা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করবেন।
(শুআবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
আর রমজানের প্রতি ভালোবাসার এমন এক উদাহরণ তিনি উপস্থাপন করেছেন, যা অন্য কোনো মাসে নেই। অন্যান্য মাসে চাঁদ দেখার জন্য দুই ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য আবশ্যক, কিন্তু রমজানের জন্য এর বিশেষ মর্যাদা এই যে একজন ব্যক্তি চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলেই তা গ্রহণযোগ্য হয় এবং পরদিন থেকেই রোজা রাখতে বলা হয়েছে।
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৩৪০-২৩৪১)
পাকিস্তানে ট্রেনে হামলা: জিম্মি ১৮২, নিহত ২০ সেনা


প্রেসনোট আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান অঞ্চলে যাত্রীবাহী একটি ট্রেনে হামলা চালিয়ে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা। সেখানে সামরিক কর্মকর্তাসহ ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলুচিস্তানের বোলান এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় গোলাগুলিতে ২০ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএলএ। তবে পাকিস্তানি কতৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিকত করেনি। অন্যদিকে, গোষ্ঠিটি হুমকি দিয়ে বলেছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বা পুলিশ যদি জিম্মিদের বাঁচাতে কোনো ধরনের অভিযান চালায় তাহলে সকল জিম্মিকে হত্যা করা হবে। খবর রয়টার্সের।
দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, জাফর এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনে ৪০০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার পেশওয়ারের উদ্দেশে যাওয়ার সময় সেটি হামলা চালিয়েছেন সশস্ত্র বন্দুকধারীরা।
হামলাকারীরা নারী, শিশু, প্রবীন ও বেলুচিস্তানের নাগরিকদের নিরাপদে ছেড়ে দিয়ে বাকী ১৮২ জনকে জিম্মি করেছে। তাদের উদ্ধারের কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। সাংবাদিকদের ইমেইল এবং টেলিগ্রামে এক পোস্ট করে এ তথ্য জানিয়েছে বিএলএ।
পাকিস্তানের পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছে, হামলায় ট্রেনের চালকসহ তিনজন আহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে তারা। ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নওয়াজ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিরীহ যাত্রীদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
দেশে ফিতরা জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৮০৫ টাকা


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক : এবার দেশে সাদাকাতুল ফিতরা প্রদানের হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সকাল ১১টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সাদাকাতুল ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক।
সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ইসলামী শরীয়াহ মতে, আটা, যব, কিসমিস, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যে কোন একটি দ্বারা ফিতরা প্রদান করা যায়। গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬শ’ ৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১১০ (একশ দশ) টাকা প্রদান করতে হবে। যব দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৫৩০ (পাঁচশ ত্রিশ) টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২ হাজার ৩১০ (দুই হাজার তিনশ দশ) টাকা, কিসমিস দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৯৮০ (এক হাজার নয়’শ আশি) টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা ৩ কেজি ৩ শ’ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২ হাজার ৮০৫ (দুই হাজার আটশ পাঁচ) টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।
দেশের সকল বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনিরের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে এই ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে। মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী উপযুক্ত পণ্যগুলোর যে কোন একটি পণ্য বা এর বাজার মূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতরা আদায় করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, উপর্যুক্ত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যের তারতম্য রয়েছে। তদানুযায়ী স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও সাদাকাতুল ফিতরা আদায় হবে।
সভায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্ণর মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, ড. খলীলুর রহমান মাদানী, মাওলানা শাহ মোঃ নেছারুল হক, শায়খ যাকারিয়া (রা.) রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাইদ, ইসলামি আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন অধ্যাপক ড. ওয়ালিউল্লাহ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব (মহাপরিচালক রুটিন দায়িত্ব) মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার, মুহাম্মদ জালাল আহমদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মুফাসসির ড. মাওলানা মুহাম্মদ আবু সালেহ পাটোয়ারী, পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের উপ-পরিচালক মাওলানা মোঃ জাকির হোসেনসহ বিশিষ্ট ওলামায়ে-কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণ সুরমা সমাজ কল্যাণ সমিতি ইউকের উদ্যোগে রমজানের ফুড প্যাকেট বিতরণ


লন্ডন অফিস: প্রতিবারের ন্যায় ধারাবাহিকভাবে এবারও দক্ষিণ সুরমা সমাজ কল্যাণ সমিতি ইউকের সৌজন্যে দক্ষিণ সুরমার ৮টি ইউনিয়ন ও সিটি কর্পোরেশনের ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় সহস্রাধিক পরবিবারে মধ্যে রমজান মাসের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার জালালপুর কলেজে ফুড প্যাকেট বিতরণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বিশিষ্ট মুরব্বি ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুক্তার আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা ও সুইন্ডন কাউন্সিলের সাবের মেয়র কাউন্সিলর জুনাব আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপদেষ্টা আব্দুল আহাদ, সিনিয়র সদস্য আব্দুল হক আবু, ক্রীড়া সম্পাদক শিবলী আহমদ এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন ফাহিম আহমদ এবং পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আল মারজান।
চোখের পাতা নড়েছে মাগুরার সেই শিশুটির: উপ-প্রেসসচিব


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক: মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির শারীরিক অবস্থান সামান্য উন্নতি হয়েছে; পাঁচদিনের মাথায় তার চোখের পাতায় নড়াচড়াও দেখা গেছে।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানিয়েছেন চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে।
তিনি বলেন, “চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো শিশুটি চোখের পাতা নেড়েছে।
“তবে শ্বাসরোধের কারণে তার মস্তিকে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল। মস্তিষ্কে পানি জমে গিয়েছিল, যেটা অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তার বুকের মধ্যে যে বাতাস জমে ছিল সেটা দূর করা গেছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী দুই-এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ নিয়মিত শিশুটির খোঁজখবর রাখছেন জানিয়ে আজাদ মজুমদার আরও বলেন, “আজও তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।”
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির চিকিৎসা চলছে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) প্যাডিয়াট্রিক আইসিইউতে।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) এনে ভর্তি করা হয় এবং পরে শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
গত শনিবার ঢাকা মেডিকেলে শিশুটির অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’ জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে আনা হয়।
রোববার সকালে শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে সিএমএইচে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সেখানে তিনি শিশুটির সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
ধর্ষণের ওই ঘটনায় শিশুটির বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি, দুলাভাই ও দেবরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি: জাতিসংঘ মহাসচিব


প্রেসনোট নিউজ ডেস্ক: সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে নেওয়া সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই। আমরা আপনাদের সংস্কার প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিতে এখানে এসেছি। আমরা আপনাদের সর্বোত্তম সফলতা কামনা করি। যেকোনো সহযোগিতা লাগলে আমাদের জানান।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আজ শুক্রবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে এক বৈঠকে সংস্কার এজেন্ডার প্রতি জাতিসংঘের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বিশ্বব্যাপী ‘সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠী’ রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি চার দিনের সফরে গতকাল ঢাকায় আসেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই সংস্কার প্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি ‘বাস্তব রূপান্তর’ নিশ্চিত করবে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি যে সংস্কার প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে’।
গুতেরেস বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে তিনি রমজান মাসে বাংলাদেশে এসেছেন।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত ১২ লাখ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি’। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে’।
‘মানবিক সহায়তা হ্রাস করা একটি অপরাধ’ উল্লেখ করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করছে, কিন্তু তখন আবার বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা সংকুচিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের ‘অপরিসীম কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়’।
তিনি বলেন, ‘আপনার আসার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হতে পারত না। আপনার সফর কেবল রোহিঙ্গাদের জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও সময়োপযোগী’।
প্রধান উপদেষ্টা গুতেরেসকে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতিমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, দলগুলো ছয়টি কমিশনের সুপারিশসমূহের সাথে একবার একমত হলে, তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচন সংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে, তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগিতা চান, যাতে রোহিঙ্গারা সম্মানের সাথে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ফিরে যেতে পারে। তিনি বলেন, যতদিন তারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে ততদিন পর্যন্ত তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা যেন নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। বিশ্বকে জানতে হবে তারা কতটা কষ্ট পাচ্ছে। তাদের মধ্যে একটা হতাশার অনুভূতি রয়েছে’।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এবং তাদের জন্য সহায়তা সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেবেন।
গুতেরেস বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম ‘অসাধারণ’ এবং বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অগ্রভাগে রয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন,‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
অধ্যাপক ইউনূসও বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদ্যেদের প্রশংসা করে বলেন, এই মিশনে কাজ করার ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন,‘শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ’।
বৈঠকে ভূ-রাজনীতি, সার্কের বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশী দেশেগুলোর সম্পর্কের বিষয় নিয়েও আলোচনায় হয়। অধ্যাপক ইউনূস দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরামকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে একাধিক বন্দর নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কেও কথা বলেন, যা নেপাল ও ভুটানসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দেশকে ‘একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও জাপানসহ প্রায় প্রতিটি দেশের সমর্থন পেয়েছে।অর্থনীতি প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাঁর সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত, সংকোচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙ্গে পড়া অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি এখন সুসংহত হয়েছে। রপ্তানি কয়েক মাস ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো অবস্থানে রয়েছে’।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অর্থনীতি এমনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ।তিনি বলেন,‘আমরা এলডিসি উত্তরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি’। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামলে লুটপাট হওয়া কয়েকশো বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আগের সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনীতির ভঙ্গুর পরিস্থিতি তাকে ১৯৭৪ সালের পর্তুগালের বিপ্লবী দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।